মোঃ আমিনুল ইসলাম জুয়েল,নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার নন্দীগ্রামে একাধিক হত্যা মামলার আসামী আখের আলীকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার রহস্য উন্মোচন সহ হত্যাকারী কালা মানিক ওরফে বাচ্চু (৫৫) কে গ্রেফতার করেছে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত কালা মানিক ওরফে বাচ্চু নন্দীগ্রাম উপজেলার কৈডালা গ্রামের মৃত রমেশের ছেলে। ১২সেপ্টেম্বর ভোরে খাগড়াছড়ির দাতকুপিয়া থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কালা পাহাড় নামক টিলায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। উক্ত বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় প্রেস ব্রিফিং করেন নন্দীগ্রাম থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, নিহত আখের আলীর কাছ থেকে পাওনা টাকা চাওয়ায় কালা মানিক ওরফে বাচ্চুকে চর থাপ্পড় মারে আখের আলী। এর বদলা নিতে এবং নিহত আখের আলীর স্ত্রীর সাথে গোপন পরকিয়া সম্পর্ক স্থায়ী করার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে তাকে ডেকে এনে প্রথমে এলোপাতাড়ি আঘাত পরবর্তীতে জবাই করে হত্যা করা হয়। একটা সিন্দুক চুরি করে জঙ্গলে রেখেছি চল নিয়ে আসি এমন লোভ দেখিয়ে আখের আলীকে ডেকে নিয়ে নিজ হাতে জবাই করে হত্যা করে কালা মানিক ওরফে বাচ্চু। পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্বেই হত্যার কাজে ব্যবহৃত লোহার রড-চাপাতি এবং সিন্দুকের আকার দিয়ে বস্তায় কয়েকটি ইট ঘটনাস্থলে রেখে আসে এবং পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড ঘটায়। গ্রেফতারের পর কালা মানিক ওরফে বাচ্চুর দেয়া স্বীকারোক্তি ও তথ্য মতে হত্যার কাজে ব্যবহৃত লোহার রড-চাপাতি-ইটের বস্তা-ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। 
হত্যাকারী কালা মানিক ওরফে বাচ্চু এবং নিহত আখের আলীর পরিচয় হয় জেলখানায়। বার বার জেলে আসা যাওয়ার সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। জেল থেকে বেরিয়ে কালা মানিক ওরফে বাচ্চু গত দুমাস ধরে আখের আলীর বাড়িতেই থাকতো এবং বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াতো।
হত্যার দিন গত ২১ আগষ্ট রাত্রী আনুমানিক সাড়ে নয়টার সময় আখের আলী ও বাচ্চু মিয়ার অবস্থান তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনাস্থল এলাকায় পাওয়া যায়।ঘটনার পর হইতে বাচ্চু মিয়া পলাতক থাকায় বাচ্চু মিয়ার সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত হয়ে তথ্য প্রযুক্তি সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কালা মানিক ওরফে বাচ্চু মিয়া পঞ্চগড় জেলার বোদা থানা এলাকায় অবস্থান করছে। সঙ্গে সঙ্গে এসআই বিকাশ চক্রবর্তী সহ চৌকস টিম সেখানে অভিযানে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে না পেয়ে ৭/৮টি বাড়ি নজরদারীতে রেখে জানা যায় প্রায় ১০ দিন অবস্থান করে কালা মানিক ওরফে বাচ্চু বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলায় অবস্থান করছে। পরবর্তীতে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আশরাফুল আলম এর নেতৃত্বে চৌকস টিম খাগড়াছড়ির সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায়, ১২ই সেপ্টেম্বর ভোরে খাগড়াছড়ি দাতকুপিয়া থেকে ২৫ কিঃমিঃ দুরে কালা পাহাড় নামক টিলায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকারী কালা মানিক ওরফে বাচ্চু কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী বাচ্চু মিয়া বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক হত্যার কথা শিকার করে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২২শে অক্টোবর দুপুরে নন্দীগ্রাম পৌর ওমরপুর এলাকায় সতীশচন্দ্র কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজের পার্শ্বে ধানক্ষেত থেকে বহু মামলার আসামী আখের আলীর ক্ষত-বিক্ষত গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ। নিহত আখের আলী বগুড়া সদরের সাবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। সে পেশায় বালু ব্যবসায়ী ছিলেন। নিহত আখের আলীর নামে আপন বড় ভাই হত্যাসহ তিনটি হত্যা মামলা এবং  ছিনতাই ডাকাতি সহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। নিহত আখের আলীর লাশের পার্শেই জঙ্গল থেকে একটি পালসার মোটরসাইকেল ও একটি মোবাইল উদ্ধার করে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ।